কাটাকাটি ২০

কী লিখব ঠিক জানি না, শুধু লিখব বলেই এডিটর খোলা আর খটখট করে কী-বোর্ড চালানো। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু কতটুকু বলব, কতটুকু বলা যায় এই সন্দেহে শব্দেরা গোপন থেকে যায়, চিন্তারা আড়ালে থেকে যায়। দিনগুলো সব আগের মত, কখনো একঘেয়ে আবার কখনো মাতাল করা। কী বলব তা জানিনা তাও বলতে ইচ্ছে হয়।

মানুষগুলো সব বদলে যায়। আমরা চাই সব থাকুক আগের মত তাও সব বদলে যায়। ইন্টারে মুনীর চৌধুরীর নাটকে একটা দারুণ নাটুকে ডায়লগ ছিল- মানুষ কারণে অকারণে বদলায়। বোর্ড পরীক্ষার ব্যাখা প্রশ্নের জন্য দারুণ গূরুত্বপূর্ণ একটা লাইন। বারবার খাতার পাতা ভরে ব্যাখ্যা লিখেছি তবে আসল ব্যাখ্যা জানতাম কিনা জানি না হয়ত এখনো জানি না আসল ব্যাখ্যা কী। তবে এখন বুঝি সত্যি সত্যি মানুষ বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়। জগতের বিবর্তনের অন্যতম বড় সত্য- সার্ভাইভেল ফর দ্যা ফিটেস্ট। হয়ত সে কারণে মানুষ বদলায়, বেঁচে থাকবে বলেই হয়ত বদলে যায়। যে যত দ্রুত বদলে যেতে পারে সে তত দ্রুত হয়ত সফল হয়। এইসব বিবর্তনবাদী নিয়ম শেষেও আমরা কখনো কখনো চায় কিছু কিছু জিনিস যেন না বদলায়। তবে ইন্টারের বাংলা পরীক্ষার মত আমাদের জীবনেও একটা গূরুত্বপূর্ণ লাইন- মানুষ কারণে অকারণে বদলায়।

আজকে ক্লাসে ঢুকার একটু আগেই শুনলাম খবরটা, তারেক মাসুদের মৃত্যুর খবর। এক বন্ধু ফোনে খবরটা দিল, তার চাচাও আহত হয়েছেন ঘটনায়। তারেক মাসুদ আমার পরিচিত কেউ নন, কোনদিন দেখাও হয়নি তার সাথে তবে তার সাথে দেখা করবার ইচ্ছে ছিল আমার। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখতে নেই তাই করবার ইচ্ছে আছে এমন অনেকগুলো কাজের লিস্ট থেকে একটা কাজ কমে গেল আজ। হয়ত সেই কারণে মনটা খারাপ হয়ে যায়। লোকটার কোন সিনেমাই আমার দেখা হয় নি। দেখব একদিন সময় করে তাই মাটির ময়না দেখা হয় নি তার মৃত্যুর আগে। তবে মুক্তির গান দেখা হয়েছে অনেক আগেই। মুগ্ধ হয়েছিলাম প্রথম দর্শনেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সব সময় অসম্ভব কৌ্তুহল হয় সবসময়। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত লেখা, গান কিংবা সিনেমা মুগ্ধ করে সবসময়। আর মুক্তির গানের মত এত দূর্লভ সব ফুটেজ নিয়ে করা এই ডকু যে আর মুগ্ধ করবে তাই স্বাভাবিক। লেয়ার লেভিনের ঘরে পরে থাকা ফুটেজ গুলোই তার সম্পাদনায় নতুন প্রাণ নিয়ে আসে “মুক্তির গান” হিসেবে। তবে আজকে এইসব ইতিহাস, মানুষটা ইতিহাস। একটু আগে বলা শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলেও আজকের ঘটনায় বিগত ইতিহাস। আমরা বড় ইতিহাস ভালবাসি তাই আমাদের কীর্তিমানদের জোর করে ইতিহাসের পাতায় ঠেলে দিই।

একটু আগে আকবর আলী খানের জীবনানন্দ ও তার বনলতা সেন নিয়ে ব্যাখ্যা পড়ছিলাম তার অন্ধকারের উৎস হতে বইটা থেকে। কবিতায় আমার বোধ বড় কম, ইন্টারের বাংলা বইয়ের মাঝেই আমার কবিতা পাঠের সমাপ্তি। তবে জীবনানন্দ আর তার বনলতা সেনের কথা বাংগালী মাত্রই শুনেছে। আমিও ব্যাতিক্রম নই। আকবর আলী খানের এই ভিন্ন পাঠ কৌ্তুহলী করল। ভূমেন্দ্র গুহের সম্পাদনায় জীবনানন্দের লিটারেরি নোটস সংগ্রহ করতে হবে। কৌ্তুহল বড় মারাত্মক। সে কবিতা বিমুখ মানুষকেও কবিতার ব্যাখ্যার মত জটিল জায়গায় হাজির করতে চায়।

রাতের বেলা শব্দরা মারাত্মক। একেকটা শব্দ একেকটা ব্যাখ্যা আর একেকটা গল্প। আমি রাতজাগা মানুষ তাই রাতবিরাতের শব্দদের সাথে সখ্য। এই রাতের শব্দদের নিয়ে একবার একটা গল্প লিখেছিলাম, ব্যার্থ গল্প। যা বলতে চেয়েছিলাম তার ধারে কাছেও যেতে পারিনি, বোধ আর প্রকাশের বিশাল ব্যাবধান। প্রতিরাতে ভাবি পুরাতন এইসব বাজে গল্প গুলো নতুন করে লিখব কিন্তু ঠিক কতটুকু লেখা উচিত এই মাত্রাটাই হয়ত ঠিক করে ধরতে পারি না তাই কিছুই লেখা হয় না। এইদিক দিয়ে অবশ্য এইসব হাবিজাবি দিনলিপি ভাল। তাদের কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই তাই রাতের বেলা এইসব দিনলিপি বরং ভাল।

2 thoughts on “কাটাকাটি ২০

রিপন ঘোষ এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল